পেয়ার আহাম্মদ চৌধুরীঃ- ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে ফেনীর ফুলগাজীর জগৎপুরে পরশুরামের সিএনজি অটোরিকশা চালক মুলকত আহাম্মদ (কালা মিয়া) হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুর রহমান মানিক জেলখানা থেকে বারবার হত্যার হুমকি দিয়েছিল বলে জানান সাংবাদিক আবু ইউসুফ মিন্টু। সোমবার(৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি জানান, তার দেয়া স্ট্যাটাসটি ” সত্যের সন্ধানে ” পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো- “মানিক জেলে থেকেও সিরাজ, মফু সহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে বহুবার হুমকি দিয়েছিল কালা হত্যার রহস্য উদঘাটনে আমার সাথে দীর্ঘদিন ধরে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছেন সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা বাদল, মিজান, আব্দুর রহিম। পেশাগত দায়িত্ব পালনে মাঝে মাঝে পরশুরামে আটকে যেতাম, আমার নিজস্ব পরিবহন না থাকায় কালা ছিল আমার একমাত্র ভরসা। যত রাত হোক আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিত সিএনজি চালক কালা। তাই কালার সাথে আমার একটা আলাদা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুধু আমাকে নয় মধ্যরাতে অসংখ্য অসুস্থ রোগীকে ফেনী হাসপাতালে পৌঁছে দিতে একমাত্র ভরসা ছিল কালার সিএনজি। পরিশ্রম করে একটি সিএনজি থেকে দুটি সিএনজি কিনেছিল কালা। কালার সিএনজির উপর চোখ পড়ে শকুনদের। তখনকার সময় ফেনী জেলার সবচেয়ে বড় ছিনতাইকারী চক্রের সাথে জড়িত ছিল মানিক। মানিকের নেতৃত্বে কালার সিএনজি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরশুরাম সোনালী ব্যাংকের সামনে থেকে যাত্রীবেশে ভাড়া নিয়ে সিএনজি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে মানিকরা। কালা সিএনজি ছিনতাইয়ে বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা তার গলায় তার পেচিয়ে এবং কানের ভিতরে ছুরি ঢুকিয়ে কালাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘটনাস্থল ফুলগাজী থানা হওয়াতে কালার ভাই ফখরুল ফুলগাজী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তারপর থেকে শুরু হয় আমার ধারাবাহিক একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। তখন ফুলগাজী থানার ওসি তদন্ত সৈয়দুল মোস্তফা ছিলেন অসম্ভব সৎ এবং নিষ্ঠাবান অফিসার। তিনি হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য পরশুরামের “জ’ নামের একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে রহস্য উদঘাটন করেন। একে একে আটক হতে থাকেন হত্যাকারীরা। তৎকালীন সময়ে ফুলগাজী ও পরশুরাম থানা দুটিতে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করতেন সদ্যপ্রয়াত জাকারিয়া ভুইয়া। জাকারিয়া ভূঁইয়াকে ভুল বুঝিয়ে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন ছিনতাইকারীরা। ছিনতাইকারী ও তাদের গডফাদারদের নানামুখী চাপকে উপেক্ষা করে, তৎকালীন ওসি তদন্ত দফায় দফায় আসামিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে রহস্য উদঘাটন করে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। কবছর আগে একবার মানিক জেল থেকে জামিনে বের হয়ে সিএনজি নেতা বাদল মিজান, রহিম সহ আমাকে সিএনজি ষ্ট্রেশানে গিয়ে হুমকি দিয়েছিল। বাদল বেশকিছু দিন তার ভয়ে পালিয়ে ছিল।” উল্লেখ্য:ফুলগাজীতে ২০১০ সালে সিএনজি অটোরিক্সা চালক মুলকত আহম্মদ কালা মিয়া হত্যা মামলায় সোমবার তিন আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি অপর এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। ফেনী জেলা ও দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছা এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার ১৬ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি হাফেজ আহম্মদ জানান, মুলকত আহম্মদ কালা মিয়া হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামী হুমায়ুন হাছান রাকীব, আবদুর রহমান মানিক ও আবু তৈয়ব বাবলু। একই সাথে তাদের ৪০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেয়া হয়। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামী সুমন চন্দ্র রায়। তাকেও ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। খালাসপ্রাপ্ত অপর ১৬ জন হলেন মো: রাসেল, সোহাগ, আলমগীর হোসেন বাবু, মোশারফ হোসেন প্রকাশ মোশারফ , রুবেল মিয়া প্রকাশ রুবেল , দিদার হোসেন প্রকাশ রিপন প্রকাশ শিকদার , নুর মোহাম্মদ জুয়েল প্রকাশ জনি, মাঈন উদ্দিন প্রকাশ ঝিনুক, মোঃ জহির, সাফায়াত আহম্মদ পাটোয়ারী প্রকাশ রাকিব, হাছান ইমাম প্রকাশ হাসান, মো: সাফুল ইসলাম, মো: লোকমান হোসেন, মোঃ শরীফ প্রকাশ টিপু, তৌহিদ উল্লাহ, এনায়েত হোসেন প্রকাশ রাজু। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি একই আদালত রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। মামলার নথিপত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরশুরাম থেকে সিএনজি অটোরিক্সা চালিয়ে মুন্সিরহাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন মুলকত আহাম্মদ কালা মিয়া। রাত ১২টা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় তাকে খোঁজাখুজি শুরু হয়। একপর্যায়ে রাত ৩টার দিকে জগতপুর রোডের টুক্কু মিয়ার পুলের পশ্চিম পাশে পানি থেকে মুলকতের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার বড় ভাই ফখরুল আহাম্মদ মজুমদার বাদি হয়ে ফুলগাজী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন ওসি সৈয়দুল মোস্তফা ২০১১ সালের ২৮ মে আদালতে ২০ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে ২০১২ সালের ২৫ জুলাই অভিযোগগঠন করে বিচার কাজ শুরু করেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।